নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিভিন্ন মহলে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। বাজেটের ভালো-মন্দ দিকগুলো নিয়েও আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী মহল পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব হলো কি না। ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ একটি সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) মনে করছে এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি উচ্চাভিলাসী। তা ছাড়া করোনার মহামারিতে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে সেটি কাটিয়ে ওঠার যে রূপরেখা দেওয়া হয়েছে সেটিও যথাযথ হয়নি বলে মনে করছে সংগঠনটি। শনিবার বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।
বিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করোনা মোকাবিলার দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে সে জন্য বিসিআই সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্য নিরাপত্তা খাতসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রণোদনা সংশ্লিষ্ট খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে।
তবে বিসিআই মনে করে করোনা পরিস্থিতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে রূপরেখা বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। আরও সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন ছিল।
ব্যক্তিশ্রেণীর আয়কর সীমা কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে, ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, সর্বনিম্ন কর পাঁচ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ কর সীমা ২৫ শতাংশ করায় অর্থমন্ত্রীকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি, যা বিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবের প্রতিফলন।
ব্যাংক থেকে সরকারের যে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যেতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বাজেট ঘাটতি এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, এ ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণের কথা বলেছে। সরকার যদি ব্যাংক খাত থেকে এ পরিমাণ ঋণগ্রহণ করে, তা হলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ ছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বাজেটের ১১.২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা এ মুহূর্তে অতিব জরুরি নয়। এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করে এমন সব প্রণোদনা প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত হলেই বেশি জনকল্যাণমুখী হতো- বলে অভিমত দিয়েছে বিসিআই।
বিসিআই সভাপতি বলেন, করোনা মোকাবিলায় বাজেটের দিক নির্দেশনা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়া উচিত, যা প্রস্তাবিত বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি। শুধুমাত্র রফতানির ওপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী শিল্পে গুরুত্বারোপ করতে হবে। সরকারের যে প্রণোদনা প্যাকেজ আছে অন্তত সেটা যথাযথভাবে বিতরণ করতে হবে। কারণ বিতরণ ছয় মাস পরে করলে কোনো লাভ হবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রবৃদ্ধি গত এক দশকে উৎসাহব্যাঞ্জক হওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের চাপে ছিল বাংলাদেশ। করোনার কারণেও সে চাপ প্রবলতর হচ্ছে। আবার বিশ^ব্যাপী ভাইরাসটির সংক্রমণের কারণে বিশাল সংখ্যক প্রবাসীর চাকরি অনিশ্চয়তার মুখে। তাই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেয়ে বিদ্যমান কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প খাতে প্রবাসী শ্রমিক এবং বেকার তরুণদের নতুন উদ্যোগ নিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ২০০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে তাদের ঋণ দেওয়া হবে তা উল্লেখ নেই। ফলে অন্যান্য বছরের মতো সুযোগ সন্ধানীরাই এ ঋণ পাবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের বেশ কিছু সংযোজন-বিয়োজন এবং কিছু দাবি জানানো হয়েছে এ ব্যবসায়ী সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এর মধ্যে আছেÑ করপোরেট কর কমানোর কারণে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কিছুটা লাভবান হবে নিঃসন্দেহে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি টিকে থাকার জন্য শিল্প ক্ষেত্রে করপোরেট করের হার হ্রাস করা দরকার।
ভ্যাট রিটার্ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন করা, রিফান্ড পদ্ধতি সহজীকরণ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের ধারা অনুযায়ী ভ্যাট, শুল্ক ও অগ্রিম কর দুই মাসের মধ্যে রিফান্ড করা। দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম করের পরিমাণ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ ও অগ্রিম কর সমন্বয়ের জন্য দুই কর মেয়াদের পরিবর্তে চার কর মেয়াদে সমন্বয়ের সুযোগ দেওয়ার হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বিসিআই কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা দরকার।